আমাদের অধিকাংশের ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য যা যা লাগে সব দেবে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ব্যক্তিগতভাবে তোমার যা যা জানা ও শেখা দরকার তা কোচিং তোমাকে দেবে না, বরং তাদের ব্যবসা করার জন্য যা যা করা দরকার তা তারা করবে। এর উপরে আবার আছে কিছু সাদুরূপধারী অসৎ কোচিং যারা তাদের ব্যবসায় জন্য ধোঁকানীতি প্রয়োগ করে থাকে। এই লেখায় সেসবই বিস্তারিত বলবো।
প্রথমেই বলি কোচিংয়ে আসলে কী হয় সেই বিষয়ে। অধিকাংশ কোচিংয়ে প্রতি ঘণ্টায় একটা করে ব্যাচ পড়ানো হয়। আর এক ব্যাচের উঠে চলে যাওয়া ও অন্য ব্যাচের সিটে বসা এই কাজে ব্যয় হয় ৫ মিনিট। আর বসার পর পূর্ববর্তী শিটের উপর ২৫টি এমসিকিউ এর একটি মডেল টেস্ট নেওয়া হয় তাতে সময় দেওয়া হয় ১৫ মিনিট। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় এবং সেই টেস্টে কে কত মার্ক পেলো তা আবার নাম ধরে ধরে কল করে এন্ট্রি করা হয়, এতে সময় যায় ১০ মিনিট। তাহলে টিচার পড়ানোর জন্য সময় পায় ৩০ মিনিট। এখন কথা হলো এই ৩০ মিনিট টিচার কী পড়ায়? আসলে এই ৩০ মিনিটে টিচার একটা হালকাপাতলা আলোচনা করে চলে যায় যা বুঝলে ভালো, না বুঝলে হাম্বা। নিজে কোনো একটা বিষয় না বুঝলে তা প্রশ্ন করে জেনে নেওয়ার মতো পরিবেশ ও সুযোগ সেখানে থাকে না। আর ক্লাস হয় সপ্তাহে ৩ দিন। ফলে সপ্তাহে তারা পাঠদান করে ৯০ মিনিট বা দেড় ঘন্টা।
অল্প কিছু ভালো কোচিং আছে যেগুলো প্রাই সবই সায়েন্সের। মানবিক সেক্টরটা হলো ধোঁকাবাজি ব্যবসার বড় সুবিধাস্থল; তারা ভালো শিক্ষক ও বেশি সময় দিয়ে না পড়িয়ে বরং একগাদা শিট ও গাইড ধরিয়ে দেয় ও প্রতিদিন মডেল টেস্ট নেয়। কারো কিছু জানার ঘাটতি থাকলে তা আর জানা বা শেখা সম্ভব হয় না। তাহলে কোচিংয়ের ক্রেডিট কোথায়? মডেল টেস্ট আর গাইড তো বাজার থোকেই কেনা যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে সায়েন্স এর জন্য উদ্ভাস ও রেটিনা ভালো, আর্টস এর জন্য ফোকাস ভালো। কমার্স এর বিষয়ে ভালো এমন এককভাবে কেউ নাই। UCC এর কিছুই ভালো নয়, তারা মূলত পরিচয় কিনে থাকে।
পরিচয় কেনা তথা ধোঁকানীতি বিষয়টা ক্লিয়ার করি। এই নীতিতে অসৎ উপায় অবলম্বন করে কোচিংয়ের প্রচারণার জন্য ভালো ছাত্রদের পরিচয় কেনা হয়। আর এই পরিচয় কেনা হয় দুইভাবে।
প্রথমত, তারা ঢাকায় তাদের মেইন শাখায় নটরডেম ও অন্যান্য কলেজের কিছু ভালো ছাত্রদের নিয়ে কয়েকটি স্পেশাল ব্যাচ বানিয়ে তাদেরকে আবাসিক সুবিধাসহ আলাদাভাবে অনেক সময় নিয়ে পড়ায় আর এরা ০১ থেকে ৫০০ এর মধ্যে সিরিয়ালে থেকে চান্স পেলে তাদের ছবি বিজ্ঞাপনে দেয়। এভাবে দেশজুড়ে ছাত্রদের মন ভুলিয়ে ভর্তি নেয় কিন্তু ভালো পড়ায় না।
দ্বিতীয়ত, ঢাবির বিভিন্ন ইউনিটে ১ম থেকে ২০ তম স্থান অধিকারীদেরকে টাকা দিয়ে তাদের পরিচয় কিনে নেওয়া যে সে তাদের কোচিংয়ে পড়েছিল। টাকা দিয়ে তাদের কাছে থেকে একটি ফরম পূরণ করে নেবে ও ছবি নেবে। আর এটাকে তারা প্রমাণ হিসেবে দেখাবে যে অমুক তাদের ছাত্র ছিল।
কিছু অসৎ কোচিং বন্ধ করে দেওয়া দরকার এবং সবার আগে UCC বাতিল করা দরকার, ফালতু কোচিং। ২০১১ সালে ইংলিশ এর ১২টা শিট পড়ে মাত্র ২টা প্রশ্ন কমন পেয়েছিলাম DU এর "খ" ইউনিটে। অথচ সেই বছর English for Today (For Classes XI-XII) বোর্ড বই এর পড়ার লাইন হতে হুবহু ১২টি প্রশ্ন কমন ছিল, কিন্তু আমি সেটা পড়ার সময় পাইনি; UCC এর ফালতু শিট পড়ে সময় নষ্ট করেছি। যারা আবেগের বশে নাম ধাম দেখে UCC তে ভর্তি হয় তারা রামধরা খায়।
সরকার বন্ধ না করলেও আপনারা পাবলিকলি এসব কোচিংকে বয়কট করুন।
এবার আসি কোচিং এর গাইড ও শিট এর বিষয়ে। তার আগে একটা গল্প বলি। অনেক সময় গ্রামে যখন গরুর ডাক্তার আনা হয় ডাক্তার দেখে যে রোগ তেমন গুরুতর কিছু নয়, একটা ট্যাবলেট তিনবার করে দুইদিন খাওয়ালেই রোগ সেরে যাবে, তখন সে যদি ট্যাবলেটের নাম কাগজে লিখে দিয়ে বলে এটা এনে খাওয়ান, তাহলে গরুর মালিক ভাববে ওটা কী এমন চিকিৎসা দিল, ফলে সে বেশি ভিজিট দিতে চাইবে না। তাই ডাক্তার কৌশল করে একটা ভিটামিন ইনজেকশন দেয়; তখন গরুর মালিক ভাবে ইনজেকশন দিয়েছে, টাকা তো বেশি দিতেই হবে।
কোচিং এর ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটে থাকে। তারা যদি বলে লাইব্রেরি থেকে অমুক অমুক বই কিনে পড়েন, তাহলে তাদের নিজের আর থাকলো কী? এই পরামর্শের জন্য তো আপনি তাদেরকে বেশি টাকা দিতে চাইবেন না, তাই তারা ইয়া মোটা গাইড ও গাদা গাদা শিট তৈরি করে।
সত্য কথা হলো কোচিং তোমাকে কখনও নিরপেক্ষ পরামর্শ দিবে না, তারা তোমাকে যে পরামর্শ দিবে সেটা হলো তাদের ব্যবসায়ী পরামর্শ। তাই পরামর্শ নিতে চাইলে ভার্সিটি পড়ুয়া কোনো ভাইয়া/ আপুর কাছে পরামর্শ নাও; তারা তোমাকে নিরপেক্ষ ও বাস্তব পরামর্শ দিবে।
© মোঃ মেহেদী হাসান
এমসিএএস গবেষক,
প্রতিষ্ঠাতা,
DU Kha Unit Admission Preparation Program (DUKUAPP)
No comments:
Post a Comment